জর্জিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিজের দেশের নাগরিকদের ওপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রাসায়নিক অস্ত্র ‘ক্যামাইট’ ব্যবহারের অভিযোগ!
তিবিলিসি, জর্জিয়া: Georgian সরকারের বিরুদ্ধে গত বছরের শেষ দিকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমন করতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া ভয়ংকর রাসায়নিক অস্ত্র ‘ক্যামাইট’ (Camite) ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিবিসির একটি বিস্তারিত তদন্তে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, পুলিশের ছোড়া জলকামানের পানিতে এই রাসায়নিক মেশানো ছিল, যার ফলে তীব্র শ্বাসকষ্ট, বমি, চোখ জ্বালা ও ত্বকে পোড়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।
ক্যামাইট কী এবং কতটা ভয়ংকর?
ক্যামাইট হলো এক ধরনের ক্লোরিন-ভিত্তিক বিষাক্ত গ্যাসীয় রাসায়নিক, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসি সেনা জার্মান সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। এটি ফুসফুসে গিয়ে তীব্র প্রদাহ সৃষ্টি করে, শ্বাসনালী পুড়িয়ে দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে। এর ভয়াবহতার কারণে ১৯৩০-এর দশকেই এটির উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সনদের (Chemical Weapons Convention) অধীনে এটি নিষিদ্ধ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
কী ছিল বিক্ষোভের কারণ?
গত বছর জর্জিয়ার ক্ষমতাসীন দল ‘জর্জিয়ান ড্রিম’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল। সরকার ‘বিদেশি প্রভাব’ আইন পাস করতে চেয়েছিল, যা অনেকে রাশিয়ার মডেলের অনুকরণ বলে মনে করেন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমে আসে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ইউরোপের দিকে ঝুঁকে থাকা জর্জিয়াকে রাশিয়ামুখী করার অভিযোগে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুনঃ নাইজেরিয়ার ক্যাথলিক স্কুলে ভয়াবহ অপহরণ: ৫১ জন ছাত্র নিরাপদে ফিরল, বাকিরা কোথায়?
কীভাবে ব্যবহার হলো ক্যামাইট?
বিক্ষোভকারীদের দাবি, দাঙ্গা পুলিশ জলকামানে সাধারণ টিয়ার গ্যাসের বদলে ক্যামাইট-মিশ্রিত পানি ছোড়ে। এর ফলে যারা পানির আঘাতে ভিজেছিলেন, তাদের অনেকেরই তীব্র শ্বাসকষ্ট, রক্তাক্ত বমি, চোখে তীব্র জ্বালা এবং ত্বকে ফোসকা পড়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। হাসপাতালে ভর্তি অনেক রোগী জানান, সাধারণ টিয়ার গ্যাসের প্রভাব কয়েক ঘণ্টায় কমে গেলেও এবারের লক্ষণ কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে।
বিবিসির তদন্তে যা বেরিয়েছে
বিবিসি জর্জিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক, রাসায়নিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ, দাঙ্গা পুলিশের কয়েকজন বরখাস্ত ও পলাতক সদস্য এবং বিক্ষোভে আহতদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছে যে, ব্যবহৃত রাসায়নিকের লক্ষণ ১০০% ক্যামাইটের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, “এ ধরনের দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের ক্ষতি শুধুমাত্র ক্লোরিন-ভিত্তিক প্রাচীন রাসায়নিক দিয়েই সম্ভব।
Moving on to blocking a major artery next to the Public Service Hall.
— Marika Mikiashvili 🇬🇪🇺🇦🇪🇺 (@Mikiashvili_M) November 4, 2024
We want our country back.#GeorgiaProtests pic.twitter.com/ZvSC8MPyx8
জর্জিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া
জর্জিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবিসির এই তদন্তকে ‘বেহুদা ও হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা দাবি করেছে, পুলিশ শুধুমাত্র আইনসিদ্ধ টিয়ার গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করেছে। তবে সরকার এখনও স্বাধীন কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে তদন্তের অনুমতি দেয়নি।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কী?
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইইউ জর্জিয়ার সঙ্গে প্রার্থী সদস্যপদের আলোচনা স্থগিত করেছে। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
যদি এই অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হয়, তবে এটি হবে স্বাধীনতার পর জর্জিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে কালো অধ্যায়। নিজের দেশের নাগরিকদের ওপর নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার শুধু মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন নয়, আন্তর্জাতিক আইনেরও গুরুতর অপরাধ। জর্জিয়ার জনগণ এখনও রাস্তায় নেমে ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছে। প্রশ্ন হলো – বিশ্ব সম্প্রদায় কতদিন চুপ করে থাকবে?
.webp)