চুরি রুখতে সরকারের অ্যাপ, গোপনীয়তার ভয়ে Apple-এর কড়া আপত্তি

Bhaskar

ভারত সরকার অ্যাপল, স্যামসাং এবং শাওমি-র মতো বড় বড় স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোকে তাদের নতুন ফোনে ‘সঞ্চার সাথী’ (Sanchar Saathi) নামের একটি সরকারি অ্যাপ প্রি-ইনস্টল করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু অ্যাপল এই নির্দেশ মানতে সরাসরি না বলে দিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, এই অ্যাপের কারণে iPhone-এর iOS ইকোসিস্টেমে গুরুতর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

Apple rejects India's mandatory Sanchar Saathi app pre-install citing iOS privacy and security risks 2025, national news bangla


সরকারের দাবি, ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপটির মূল উদ্দেশ্য হলো চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন ট্র্যাক করা, সেগুলোকে ব্লক করা এবং দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবহার বন্ধ করা। শুধু তাই নয়, সরকার চায় যে এই অ্যাপ যেন ইউজার কোনোভাবেই ডিসেবল বা আনইনস্টল করতে না পারে, অর্থাৎ ফোনে স্থায়ীভাবে থেকে যায়।


সরকারকে অ্যাপলের পাল্টা যুক্তি

অ্যাপল সরকারকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বিশ্বের কোনো দেশেই তারা এ ধরনের বাধ্যতামূলক প্রি-লোড অ্যাপের নির্দেশ মানে না। কারণ তাদের মতে, যে কোনো তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ যদি সিস্টেম লেভেলে গভীর অ্যাক্সেস পায় এবং তা ইউজারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে, তাহলে iOS-এর নিরাপত্তা মডেল ভেঙে পড়তে পারে। অ্যাপলের দাবি, এর ফলে হ্যাকাররা সহজেই দুর্বলতা খুঁজে বের করে পুরো ইকোসিস্টেমকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

টেলিকম মন্ত্রক সোমবার গভীর রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, “ভারতে সেকেন্ড-হ্যান্ড মোবাইলের বাজার খুব বড়। প্রায়ই দেখা যায়, চুরি যাওয়া কিংবা ব্ল্যাকলিস্ট করা ফোনগুলোকে নতুন করে বিক্রি করা হচ্ছে। সঞ্চার সাথী পোর্টালের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ চুরি যাওয়া ফোন ব্লক করা হয়েছে। কিন্তু নতুন ফোনেও যাতে এই অ্যাপ থাকে এবং ইউজার তা মুছে ফেলতে না পারে, সেটাই আমরা চাইছি।


কংগ্রেসের তীব্র বিরোধিতা

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এই সরকারি নির্দেশের কড়া সমালোচনা করেছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে এই আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি ভেনুগোপাল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X-এ লিখেছেন, “বিগ ব্রাদার আমাদের দেখতে পারবে না। এটা নাগরিকের গোপনীয়তার উপর সরাসরি আঘাত।

আরও পড়ুন: শাংহাই বিমানবন্দরে অরুণাচলী নারীর ১৮ ঘণ্টার অপমানজনক আটক, চীনকে ভারতের কড়া প্রতিবাদ


অন্য কোম্পানিগুলোর অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়

স্যামসাং এবং শাওমি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে অ্যান্ড্রয়েড হওয়ায় তাদের পক্ষে এই ধরনের সিস্টেম অ্যাপ প্রি-লোড করা তুলনামূলকভাবে সহজ। কিন্তু অ্যাপলের iOS একটি বন্ধ ইকোসিস্টেম, যেখানে অ্যাপল নিজে ছাড়া কারও সিস্টেম-লেভেল অ্যাক্সেস দেয় না। ফলে অ্যাপলের এই অবস্থান অনেকটাই প্রত্যাশিত ছিল।

এই ঘটনা আসলে কী প্রশ্ন তুলছে?

  1. সরকারের নিরাপত্তা বনাম নাগরিকের গোপনীয়তা – কোথায় সীমারেখা?
  2. কোনো সরকার কি ফোন নির্মাতাদের উপর এমন বাধ্যতামূলক অ্যাপ চাপিয়ে দিতে পারে, যা ইউজার মুছে ফেলতেও পারবে না?
  3. অ্যাপল যদি শেষ পর্যন্ত না মানে, তাহলে কি ভারতে আইফোনের উপর নিষেধাজ্ঞা বা আমদানি শুল্ক বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ নেবে সরকার?

এখনও পর্যন্ত সরকারের তরফে অ্যাপলের এই অস্বীকৃতির পর কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে এটা স্পষ্ট যে, গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার নামে দুই পক্ষের মধ্যে একটা বড় সংঘর্ষ শুরু হয়েছে, যার ফলাফল ভারতের কোটি কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর উপর প্রভাব ফেলতে চলেছে।