ভারতের বিদেশ মন্ত্রক চীনের কাছে দিল্লি এবং বেইজিং-এ কড়া ডিমার্শ (প্রতিবাদপত্র) পাঠিয়েছে। গত ২১ নভেম্বর শাংহাই বিমানবন্দরে অরুণাচল প্রদেশের এক মহিলাকে আটকে রাখা হয়েছিল। চীনা কর্তৃপক্ষ তাঁর ভারতীয় পাসপোর্টকে ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা করে।
ওই মহিলার নাম প্রেমা ওয়াংজম থঙ্গদক। তিনি যুক্তরাজ্যে থাকেন। জাপানে ছুটি কাটাতে যাচ্ছিলেন। শাংহাইয়ে মাত্র তিন ঘণ্টার লে-ওভার ছিল। কিন্তু চীন ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের পরবর্তী ফ্লাইটে তাঁকে ওঠার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাঁকে ১৮ ঘণ্টারও বেশি সময় আটকে রাখা হয়। তিনি জানিয়েছেন, চীনা ইমিগ্রেশন কর্মীরা তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত অপমানজনক আচরণ করেছেন।
সোমবার এক্স -এ প্রেমা লিখেছেন:
২১ নভেম্বর ২০২৫ আমাকে শাংহাই বিমানবন্দরে ১৮ ঘণ্টার বেশি আটকে রাখা হয়েছিল। চীনা ইমিগ্রেশন এবং চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স বলেছে, আমার জন্মস্থান অরুণাচল প্রদেশ হওয়ায় আমার ভারতীয় পাসপোর্ট অবৈধ। ওরা বলেছে অরুণাচল চীনের ভূখণ্ড।
অরুণাচলের মহিলা, এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন,
যখন আমি প্রশ্ন করি যে সমস্যাটা কী, তখন ওরা বলে, ‘অরুণাচল ভারতের অংশ নয়’। তারপর হাসতে হাসতে বলতে থাকে, ‘তোমার চীনা পাসপোর্ট করা উচিত, তুমি চীনা, ভারতীয় নও’। আমার সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত অপমানজনক ছিল।
প্রেমা জানিয়েছেন, তিনি গত ১৪ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে থাকেন। এক বছর আগেও শাংহাই দিয়ে ট্রানজিট করেছিলেন, কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু এবার তাঁকে বলা হয়েছে, অরুণাচল চীনের অংশ বলে তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর কাছে জাপানের বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও পরবর্তী ফ্লাইটে ওঠার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: সাহারা কর্মচারীদের বেতন সংকট: সুপ্রিম কোর্টে আজ গুরুত্বপূর্ণ শুনানি
অরুণাচলের প্রেমা আরও বলেছেন,
ইমিগ্রেশনের লোকজন এবং এয়ারলাইন্সের কর্মীরা অত্যন্ত অপমানজনক ব্যবহার করেছে। আমি শাংহাই এবং বেইজিং-এ ভারতীয় দূতাবাসে ফোন করি। এক ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে চলে আসেন। তাঁরা আমাকে খাবার দেন, চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং শেষ পর্যন্ত আমাকে দেশের বাইরে বের করে আনেন। ১৮ ঘণ্টার দীর্ঘ যন্ত্রণার পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছি।
ঘটনার দিনই ভারতের বিদেশ মন্ত্রক চীনের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানায়। বেইজিং এবং দিল্লিতে আলাদাভাবে ডিমার্শ পাঠানো হয়। শাংহাইয়ে ভারতীয় কনস্যুলেটও স্থানীয়ভাবে বিষয়টি তুলে আটকে পড়া যাত্রীকে পূর্ণ সহযোগিতা করে।
জানা গেছে, ভারতের তরফে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য ও অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সেখানকার বাসিন্দারা পুরোপুরি ভারতীয় নাগরিক এবং তাঁদের ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে যাওয়ার অধিকার আছে। এই ধরনের আটকানো একেবারে হাস্যকর এবং অগ্রহণযোগ্য।
চীনা কর্তৃপক্ষের এই আচরণ শিকাগো কনভেনশন এবং মন্ট্রিল কনভেনশনের (আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সংক্রান্ত) স্পষ্ট লঙ্ঘন।
চীন ভারতের অরুণাচল প্রদেশের ওপর নিজের দাবি করছে
ভারতের তরফে আরও বলা হয়েছে, যখন দুই দেশই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময়ে চীনের এই ধরনের পদক্ষেপ অযথা বাধা সৃষ্টি করছে এবং সম্পর্কের পথে অনর্থক বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে চীন অরুণাচল প্রদেশের ওপর নিজের দাবি জোরদার করতে বারবার উস্কানিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। অরুণাচলের ডজন ডজন গ্রাম, নদী, পাহাড়ের নাম বদলে চীনা নাম দেওয়া হয়েছে। চীনের মানচিত্রে অরুণাচলকে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ বলে দেখানো হয়। ভারত এই সব দাবি বরাবরই পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই ঘটনা আবারও দেখিয়ে দিল যে, সীমান্ত বিরোধ এবং অরুণাচল প্রসঙ্গে চীন কতটা আগ্রাসী মনোভাব পোষণ করে—এমনকি সাধারণ নাগরিকদের ওপরেও তার প্রভাব ফেলতে দ্বিধা করছে না।
