নাইজেরিয়ার ক্যাথলিক স্কুলে ভয়াবহ অপহরণ: ৫১ জন ছাত্র নিরাপদে ফিরল, বাকিরা কোথায়?

Bhaskar

 নাইজেরিয়ার একটি ক্যাথলিক স্কুল থেকে অপহরণের পর অবশেষে সুসংবাদ এসেছে। প্রায় ৩০০-র বেশি শিশু-কিশোরকে বন্দুকের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই ৫০ জনের বেশি ছাত্র-ছাত্রী অপহরণকারীদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরেছে। রবিবার নাইজেরিয়ার খ্রিস্টান সংগঠনগুলো এই সুখবর জানিয়েছে।

Nigerian Catholic school's horrific kidnapping 51 students returned safely, where are the rest?, world news bangla


Nigeria Catholic School Kidnapping: ঘটনাটি ঘটেছে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় নাইজার রাজ্যের বেটি শহরে। সেন্ট মেরি কো-এডুকেশনাল স্কুলে গত শুক্রবার রাতে হামলা চালায় সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। তারা স্কুলের ছাত্রাবাসে ঢুকে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে প্রায় ৩০৩ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে অপহরণ করে জঙ্গলে নিয়ে যায়। অপহৃতদের বয়স ৮ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে ছেলে ও মেয়ে দুই-ই রয়েছে।

কিন্তু অপহরণের কয়েক দিনের মধ্যেই বড় একটা অংশ সাহস দেখিয়ে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়া (ক্যান) রোববার এক বিবৃতিতে জানায়, আজ আমরা একটি আনন্দের খবর পেয়েছি। অপহৃত স্কুলের ৫০ জনের বেশি ছাত্র-ছাত্রী অপহরণকারীদের হাত থেকে পালিয়ে তাদের বাবা-মায়ের কাছে ফিরে এসেছে। তারা সবাই নিরাপদে আছে।


বোলা আহমেদ টিনুবুওর এক্স পোস্ট

নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ টিনুবুও রবিবার রাতে নিজের এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি লিখেছেন, “সেন্ট মেরি স্কুল থেকে অপহৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা সুস্থ আছে। বাকিদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।”

তবে এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। একই সপ্তাহে নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে আরও কয়েকটি অপহরণের খবর এসেছে। গত সোমবার কেব্বি রাজ্যের একটি মাধ্যমিক স্কুল থেকে ২৫ জন ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়। এছাড়া মঙ্গলবার কোয়ারা রাজ্যের একটি গির্জায় সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। সেই গির্জায় তখন লাইভ স্ট্রিমিং চলছিল ধর্মীয় অনুষ্ঠানের। হঠাৎ গুলির শব্দে গির্জার ভেতরে ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকে চিৎকার করতে করতে দৌড়াতে থাকে। সেই ভিডিও এখনো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে।

নাইজেরিয়ার উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে গত কয়েক বছর ধরে এ ধরনের গোষ্ঠীগত অপহরণ খুবই সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সশস্ত্র জঙ্গি ও অপরাধী চক্র স্কুল-কলেজে হামলা চালিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের তুলে নিয়ে যায় এবং পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করে। অনেক সময় সরকারের সঙ্গেও আলোচনা করে টাকা আদায় করা হয়। মুক্তিপণ না দিলে শিশুদের হত্যা করা হয় বা জোর করে জঙ্গি গোষ্ঠীতে ভর্তি করা হয়।


স্থানীয় লোকজনের মধ্যে প্রচণ্ড আতঙ্ক 

সেন্ট মেরি স্কুলের ঘটনার পর থেকে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে প্রচণ্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বহু অভিভাবক রাতে ঘুমাতে পারছিলেন না। কিন্তু ৫০ জনের বেশি শিশু ফিরে আসার পর এলাকায় কিছটা স্বস্তি ফিরেছে। যদিও এখনো প্রায় আড়াইশোর বেশি ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক অপহরণকারীদের হাতে বন্দি রয়েছে। তাদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

এই ধরনের ঘটনা নাইজেরিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। অনেক অভিভাবক এখন সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। উত্তরাঞ্চলের বহু স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো খোলা আছে, সেখানেও ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে।

আরও পড়ুন: সুমো রিংয়ে নারী নিষেধাজ্ঞা: জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ


নাইজেরিয়ার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা কি বলছেন

নাইজেরিয়ার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, শুধু সেনা অভিযান দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। গরিবি, বেকারত্ব ও শিক্ষার অভাব দূর করতে না পারলে এই অপরাধী চক্রগুলোকে নির্মূল করা যাবে না। তাদের মতে, সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে।

এখনো পর্যন্ত অপহরণকারীরা কোনো মুক্তিপণ দাবি করেনি বলে জানা গেছে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, খুব শিগ্রই তারা কোটি কোটি নাইরা দাবি করতে পারে।

যাই হোক, ৫০ জনের বেশি শিশু ফিরে আসায় নাইজেরিয়ার সাধারণ মানুষের মনে একটু হলেও আলো জ্বলেছে। সবাই এখন প্রার্থনা করছেন বাকি শিশুদেরও যেন শিগগিরই নিরাপদে ফিরিয়ে আনা যায়।