মোহাম্মদ রিজওয়ান সেন্ট্রাল কন্ট্রাক্ট সই করতে অস্বীকার করেছেন, টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়ার ব্যাখ্যা চান: রিপোর্ট
পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় মোহাম্মদ রিজওয়ান পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (PCB) প্রদত্ত সেন্ট্রাল কন্ট্রাক্ট সই করতে অস্বীকার করেছেন। সম্প্রতি ওয়ানডে অধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া এই উইকেটকিপার-ব্যাটার টি-টোয়েন্টি দলে তার অব্যাহত অনুপস্থিতির কারণে পিসিবির কাছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছেন। পাকিস্তানি মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, রিজওয়ান কন্ট্রাক্ট সই করার আগে কিছু অতিরিক্ত শর্তও পেশ করেছেন, যদিও সেগুলোর বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। এই ঘটনা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরুর কয়েকদিন আগে ঘটেছে, যা পাকিস্তান ক্রিকেটে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
রিজওয়ানের টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়া এবং কন্ট্রাক্ট অস্বীকার
সমা টিভির একটি রিপোর্ট অনুসারে, মোহাম্মদ রিজওয়ান (Mohammad Rizwan) মার্চ মাস থেকে পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলে নেই। এই সময়ের মধ্যে তার সতীর্থ বাবর আজমকেও একই পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল, কিন্তু সম্প্রতি বাবরকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের জন্য দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অথচ রিজওয়ান এখনও টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে স্থান পাননি। এই বৈষম্যমূলক আচরণের কারণ জানতে চেয়ে রিজওয়ান পিসিবির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রিজওয়ান বর্তমানে পাকিস্তানের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি সেন্ট্রাল কন্ট্রাক্ট সই করেননি।
পিসিবি এখনও রিজওয়ানের দাবিগুলো মেনে নেয়নি। যদি বর্তমান পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে খেলোয়াড় এবং বোর্ডের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে পাকিস্তানের আসন্ন সিরিজগুলোতে রিজওয়ানের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া
এই মাসের শুরুতে সিলেকশন কমিটি এবং হোয়াইট-বল কোচ মাইক হেসনের সঙ্গে একটি বৈঠকের পর রিজওয়ানকে ওয়ানডে অধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার জায়গায় শাহিন শাহ আফ্রিদিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অধিনায়ক হিসেবে রিজওয়ান অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিলেন, কিন্তু আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হন এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ হারেন।
রিজওয়ান (Rizwan) মোট ২০টি ওয়ানডে ম্যাচে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যার মধ্যে ৯টিতে জয় এবং ১১টিতে পরাজয়। তার জয়ের শতাংশ ছিল ৪৫%। তিনি আগে বাবর আজমের পরিবর্তে হোয়াইট-বল অধিনায়ক হয়েছিলেন।
সেন্ট্রাল কন্ট্রাক্টে ডিমোশন
এই বছর পিসিবি নতুন সেন্ট্রাল কন্ট্রাক্টের জন্য ৩০ জন খেলোয়াড়ের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছিল, যার মধ্যে রিজওয়ানও ছিলেন। কিন্তু গত মৌসুমে ক্যাটাগরি এ-তে থাকা রিজওয়ান এবং বাবর আজম দুজনকেই ক্যাটাগরি বি-তে নামিয়ে আনা হয়েছে। পিসিবি এই বছর কোনো খেলোয়াড়কে ক্যাটাগরি এ চুক্তি দেয়নি, যা খেলোয়াড়দের মধ্যে অসন্তোষ বাড়িয়েছে।
রিজওয়ানের অধিনায়কত্ব সরিয়ে নেওয়ার পিছনের কারণ?
টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে, রিজওয়ান বেটিং কোম্পানিগুলোকে প্রমোট করার বিরোধিতা করায় তাকে অধিনায়ক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক রশিদ লতিফ দাবি করেছেন যে, ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার সমর্থন দেওয়ার কারণে রিজওয়ানকে সরানো হয়েছে। এই দুটি দাবি পাকিস্তান ক্রিকেটে রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক চাপের ছায়া ফেলেছে।
রিজওয়ান সামাজিক মাধ্যমে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সক্রিয় থাকেন এবং বেটিং কোম্পানির সঙ্গে জড়িত থাকতে অস্বীকার করেছেন বলে জানা যায়। এই বিষয়গুলো পিসিবির সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
পিসিবি এবং রিজওয়ানের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত
পিসিবি রিজওয়ানের দাবিগুলো মেনে নিলে তার টি-টোয়েন্টি দলে ফেরা নিশ্চিত হতে পারে। কিন্তু যদি বোর্ড কঠোর অবস্থান নেয়, তাহলে রিজওয়ানের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে রিজওয়ান ওয়ানডে দলে আছেন, কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য তার নাম নেই।
পাকিস্তান ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব এবং সিলেকশন নিয়ে বারবার বিতর্ক উঠেছে। বাবর আজম, শাহিন আফ্রিদি, রিজওয়ান—এই তারকাদের নিয়ে পিসিবির সিদ্ধান্ত প্রায়ই সমালোচিত হয়। এবার রিজওয়ানের কন্ট্রাক্ট অস্বীকার নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
রিজওয়ানের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান
মোহাম্মদ রিজওয়ান পাকিস্তানের অন্যতম সেরা উইকেটকিপার-ব্যাটার। টেস্টে তিনি ৩০০০+ রান করেছেন, ওয়ানডেতে ২০০০+ এবং টি-টোয়েন্টিতে ৩০০০+ রান। তার স্ট্রাইক রেট এবং ধারাবাহিকতা তাকে অপরিহার্য করে তুলেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সিলেকশন সিদ্ধান্ত তার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আরো পড়ুন: রশ্মিকা vs দীপিকা: কাজের সময়সীমা বিতর্কে নতুন মোড়
পাকিস্তান ক্রিকেটের সংকট
মোহাম্মদ রিজওয়ানের সেন্ট্রাল কন্ট্রাক্ট অস্বীকার এবং টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়া পাকিস্তান ক্রিকেটের অভ্যন্তরীণ সমস্যার প্রতিফলন। পিসিবির স্বচ্ছতার অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং বাণিজ্যিক চাপ খেলোয়াড়দের মনোবল ভাঙছে। আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে পাকিস্তানের পারফরম্যান্স এই বিতর্কের ছায়ায় থাকবে। রিজওয়ান (Rizwan) যদি তার দাবি আদায় করতে পারেন, তাহলে এটি অন্য খেলোয়াড়দের জন্য উদাহরণ হয়ে উঠবে। অন্যথায়, পাকিস্তান আরেকটি তারকা হারাতে পারে।
