রশ্মিকা vs দীপিকা: কাজের সময়সীমা বিতর্কে নতুন মোড়

Bhaskar

 রশ্মিকা মন্দান্না কাজ-জীবনের ভারসাম্য নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করলেন। দীপিকা পাড়ুকোনের ৮ ঘণ্টা কাজের দাবির বিতর্কের মধ্যেই তিনি বললেন, অতিরিক্ত কাজ করা টেকসই নয়।

Rashmika মন্দান্না সাক্ষাৎকারে ওভারওয়ার্ক নিয়ে কথা বলছেন, দীপিকা পাড়ুকোনের ৮ ঘণ্টা শিফট বিতর্কের মাঝে


বিনোদন জগতের চকচকে আলোয় যখন তারকারা হাসি মুখে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান, তখন তাদের পর্দার আড়ালের কষ্ট আমরা খুব কমই দেখি। দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার জনপ্রিয় মুখ রশ্মিকা মন্দান্না ( Rashmika) সম্প্রতি সেই পর্দা সরিয়ে দিয়েছেন। বিজয় দেবেরাকোন্ডার সঙ্গে বাগদানের গুঞ্জন আর নতুন ছবি থাম্মার সাফল্যের মাঝে তিনি ব্যস্ত দ্য গার্লফ্রেন্ড ছবির শুটিংয়ে। কিন্তু এরই মধ্যে প্রযোজক শ্রীনিবাস কুমার তাঁর কাজের প্রশংসা করে বলেছেন, রশ্মিকা কখনো কাজের সময়সীমা বেঁধে দেন না। এই মন্তব্য এসেছে ঠিক সেই সময়ে, যখন দীপিকা পাড়ুকোন সঞ্জয় রেড্ডি ভাঙ্গার ছবি স্পিরিট-এর জন্য ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।


রশ্মিকা (Rashmika) এই বিষয়ে নিজের মত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, “আমরা অতিরিক্ত কাজ করার গৌরব করি, এটা ভালো নয়। আমি নিজে অতিরিক্ত কাজ করি, কিন্তু আপনাদের বলছি—এটা করবেন না। এটা টেকসই নয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার, ৯-১০ ঘণ্টাও নিতে পারেন। বিশ্বাস করুন, এটা পরবর্তী বয়সে আপনাকে বাঁচাবে।”


রশ্মিকার অতীত অভিজ্ঞতা: মাসের পর মাস ৮ ঘণ্টা ঘুমহীন

কয়েক মাস আগেই রশ্মিকা জানিয়েছিলেন, তিনি মাসের পর মাস পুরো ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে পারেননি। এই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বলছেন, “আমি দুটোই করেছি—সীমিত কাজ আর অতিরিক্ত কাজ। বিশ্বাস করুন, অতিরিক্ত কাজ মূল্যহীন।” তিনি স্বীকার করেন, তিনি নিজেকে অতিরিক্ত চাপে রাখেন। “আমি সাধারণ মানুষের থেকে অনেক বেশি কাজ নিই। কিন্তু টিম যদি বলে, ‘এই লোকেশন শুধু এখন পর্যন্ত আছে, এতগুলো শট নিতে হবে’, আমি বুঝি এবং রাজি হই।”


সিনেমা জগতের বাস্তবতা: প্রতিদিন ১২-১৬ ঘণ্টা কাজ

পরিচালক রাহুল রবীন্দ্রন যখন বলেন, “সিনেমায় প্রায় প্রতিদিনই এমন হয়”, রশ্মিকা সায় দিয়ে বলেন, “হ্যাঁ, সিনেমায় এটা প্রায় প্রতিদিনের ব্যাপার। আমার টিমের প্রতি ভালোবাসা আর সম্মানের কারণেই আমি এটা করি।” কিন্তু তিনি স্পষ্ট করে দেন, “যদি আমার নিজের ইচ্ছা থাকত, আমি বলতাম—দয়া করে অভিনেতাদের এমন করতে বাধ্য করবেন না।”


তিনি শুধু অভিনেতাদের কথা বলছেন না। “পরিচালক, লাইটম্যান, সঙ্গীতশিল্পী—সবাই। অফিসের মতো ৯টা থেকে ৫টা বা ৬টা পর্যন্ত কাজ হোক।” তাঁর যুক্তি, “পরিবারের জন্য সময় দরকার, ঘুম দরকার, ব্যায়াম দরকার। পরে যেন আফসোস না করি যে, ‘আমি যুবায় তেষ্টা স্বাস্থ্যের যত্ন নিইনি।’”


দীপিকা পাড়ুকোনের ৮ ঘণ্টা দাবি: বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু

দীপিকা পাড়ুকোনের স্পিরিট ছবিতে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র আলোচনা চলছে। কেউ বলছেন, এটা অভিনেতাদের অধিকার। কেউ আবার বলছেন, সিনেমা একটা টিম ওয়ার্ক, সময়সীমা বাঁধলে ছবি তৈরি হবে কী করে? রশ্মিকার মন্তব্য এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি দীপিকার পাশে না দাঁড়ালেও, অভিনেতাদের স্বাস্থ্য ও মানসিক শান্তির পক্ষে সওয়াল করেছেন।

আরো পড়ুন:  অরুণাচল ডাবল সুইসাইড কেস


কাজ-জীবনের ভারসাম্য: সিনেমা জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ

সিনেমা শিল্পে কাজের চাপ অস্বীকার করার উপায় নেই। একটি ছবির শুটিংয়ে প্রায়শই ১২-১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। লোকেশন, আবহাওয়া, টেকনিক্যাল সমস্যা—এসবের জন্য সময় বাড়তে থাকে। কিন্তু রশ্মিকা প্রশ্ন তুলছেন, “এটা কি সবসময় দরকার?”


তিনি বলছেন, “আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি। কিন্তু এখন আমার হাতে কিছু নেই, কারণ আমি নিজেকে অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়েছি।” এই স্বীকারোক্তি শুধু তাঁর নয়, পুরো শিল্পের একটা বড় অংশের প্রতিচ্ছবি।


রশ্মিকার পরামর্শ: নিজের জন্য সীমা বাঁধুন

Rashmika তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পরামর্শ দিচ্ছেন:

  • অতিরিক্ত কাজ করবেন না
  • ৮-৯ ঘণ্টা ঘুম নিন
  • ব্যায়াম করুন, স্বাস্থ্যের যত্ন নিন
  • পরিবারের জন্য সময় রাখুন
  • টিমের চাপে নিজেকে হারাবেন না
  • তিনি বলছেন, “যা আরামদায়ক, যা সঠিক—তাই করুন।”


ভবিষ্যতে কী হবে?

রশ্মিকা মন্দান্নার এই সাক্ষাৎকার শুধু একজন তারকার মতামত নয়, এটা একটা আন্দোলনের সূচনা হতে পারে। দক্ষিণের ছবি থেকে বলিউড—সর্বত্র অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এখন কাজের সময়সীমা নিয়ে কথা বলছেন। প্রযোজক, পরিচালকদের কি এখন ভাবতে হবে নতুন করে?


আর রশ্মিকা? তিনি দ্য গার্লফ্রেন্ড ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত। কিন্তু এবার হয়তো একটু বেশি সচেতন—নিজের শরীর, মন আর ভবিষ্যতের জন্য।