RBI ডিসেম্বর মুদ্রানীতিতে রেপো রেট ০.২৫% কমিয়ে ৫.২৫% করেছে। রুপির রেকর্ড পতন সত্ত্বেও কাট, GDP পূর্বাভাস বেড়ে ৭.৩%। লোন সস্তা হবে? বিস্তারিত জানুন।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) শুক্রবার রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট (bps) কমিয়ে ৫.২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। রুপির ঐতিহাসিক পতন এবং ডলারের বিপরীতে ৯০-এর নীচে নেমে যাওয়া সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্লুমবার্গের জরিপে অংশ নেওয়া ৪৪ জন অর্থনীতিবিদের অধিকাংশই এই ২৫ বিপিএস কাটার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, কিন্তু রুপির ধসের কারণে শেষ মুহূর্তে অনেকেরই আশা কমে গিয়েছিল।
ভারতের মুদ্রানীতি কমিটি (MPC) এখন রেকর্ড-নিম্ন মূল্যবৃদ্ধি (ইনফ্লেশন), ৮ শতাংশের উপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং রুপির অবাধ পতনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করছে। মূল্যবৃদ্ধি এখন ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার অনেক নীচে থাকায় রেট কাটার যথেষ্ট জায়গা ছিল, কিন্তু রুপির এই দুরবস্থা অনেককে ভাবিয়ে তুলেছিল যে আরবিআই হয়তো থেমে যাবে।
ব্লুমবার্গ জরিপ ও বিরোধী পূর্বাভাস
ব্লুমবার্গের জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ ৫.২৫%-এ রেপো রেট নেমে আসবে বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু সিটিগ্রুপ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI)-র মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো পজ (কোনো পরিবর্তন না করা) দেওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল। তাদের যুক্তি ছিল—রুপি এখন রেকর্ড নীচে এবং অর্থনীতি দ্রুতগতিতে বাড়ছে, তাই রেট কমানোর ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়।
আরবিআইয়ের আজকের মুখ্য সিদ্ধান্তসমূহ (৩-৫ ডিসেম্বর বৈঠক)
আরও পড়ুনঃ Mutual Fund Sip: শুধু দৈনিক ১০০ টাকা রাখলে ২০ বছরে তৈরি হবে ৩০ লক্ষের ফান্ড
রেপো রেট ২৫ বিপিএস কমিয়ে ৫.২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
- মুদ্রানীতির ভঙ্গিমা (Monetary Policy Stance) “নিউট্রাল” বজায় রাখা হয়েছে।
- চলতি অর্থবর্ষের (FY26) জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের ৬.৮% থেকে বাড়িয়ে ৭.৩% করা হয়েছে।
- FY26-এর মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের ২.৬% থেকে কমিয়ে ২.০% করা হয়েছে।
গত দু’টি মুদ্রানীতি বৈঠকে রেপো রেট অপরিবর্তিত রেখেছিল আরবিআই। গত মাসে নতুন গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা প্রথমবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে “রেট কমানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে”। কিন্তু তারপরেই অর্থনীতির তথ্য দেখিয়েছে যে আমেরিকার ৫০% শুল্ক সত্ত্বেও ভারতের অর্থনীতি দারুণ মজবুত আছে, আর রুপি তীব্র গতিতে নীচের দিকে নেমেছে। ফলে অনেকেই ভেবেছিলেন আরবিআই এবার দীর্ঘ “পজ” পর্বে ঢুকে যাবে।
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার চিফ ইকোনমিক অ্যাডভাইজার তথা প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৌম্য কান্তি ঘোষ বলেছেন, “রেট কাটার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। রুপির এই ধসের জন্য শুক্রবারের সিদ্ধান্ত খুবই কঠিন ছিল।
রুপির পতনই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ
গত মুদ্রানীতি বৈঠকের পর থেকে রুপি প্রায় অবাধ পতনে রয়েছে। আরবিআই আগে রুপির জোরালো প্রতিরক্ষা করত, কিন্তু এবার তারা ৯০-এর নীচে নামতেও বাধা দেয়নি। তার কারণ হল—ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর অতিরিক্ত চাপ না দেওয়ার নীতি।
বিশ্লেষকদের মতে, রুপির এই দুর্বলতা আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে দিতে পারে এবং ভবিষ্যতে মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে ইনফ্লেশন এতটাই নীচে যে আরবিআই সেই ঝুঁকি নিয়েও প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন দেওয়ার পথ বেছে নিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ GST ফাঁকি দিতে কোর্টে ধাপ্পা! হাইকোর্ট ৫ লাখ জরিমানা ঠুকে দিল ব্যবসায়ীকে
কী বার্তা দিচ্ছে এই সিদ্ধান্ত?
- আরবিআই এখনও প্রবৃদ্ধির পক্ষে বেশি ঝুঁকে আছে।
- রুপির দুর্বলতা সত্ত্বেও তারা মনে করছে ইনফ্লেশন এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে।
- নিউট্রাল স্ট্যান্স বজায় রাখায় ভবিষ্যতে পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট কমানো বা বাড়ানো—দুটোই সম্ভব।
অর্থাৎ, রুপির ধস সত্ত্বেও আরবিআই অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে চায় এবং সুদের হার আরও কমার দরজা খোলা রেখেছে। আগামী মাসগুলোতে রুপি কোন দিকে যায় এবং আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির কী হয়—তার উপরেই নির্ভর করবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত।
