ময়মনসিংহে হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র নিন্দা, পরিবারকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘নৃশংস অপরাধমূলক কাজ’ বলে নিন্দা জানিয়েছে ময়মনসিংহের হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করার ঘটনায়। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার সরকারের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন এবং সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দীপু চন্দ্র দাসের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং তার পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে নিহতের পরিবারের কাছে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেন এবং এই কঠিন সময়ে সরকারের পূর্ণ সমর্থন ও সহায়তার আশ্বাস দেন।
হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা
সরকার এই হত্যাকে একটি নৃশংস অপরাধমূলক কাজ হিসেবে বর্ণনা করেছে, যার কোনো যুক্তি বা অজুহাত নেই। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, বাংলাদেশের সমাজে এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই। কোনো অভিযোগ, গুজব বা বিশ্বাসের পার্থক্য কখনোই সহিংসতার অজুহাত হতে পারে না। কোনো ব্যক্তিরই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার নেই।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তদন্ত চলছে। অন্তর্বর্তী সরকার নির্দেশ দিয়েছে যে, এই মামলাটি পূর্ণাঙ্গভাবে এবং কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই তদন্ত করা হবে। এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িতদের আইনের পূর্ণ শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ জর্জিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে বিষাক্ত জলকামানে ক্যামাইট গ্যাস ছোরার অভিযোগ
অন্তর্বর্তী সরকার, পরিবারকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, দীপু চন্দ্র দাসের পরিবারকে আর্থিক ও কল্যাণমূলক সহায়তা প্রদান করা হবে। আগামী দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে এবং তাদের পাশে থাকবে।
দীপু চন্দ্র দাস ময়মনসিংহের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গত ১৮ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে উত্তেজিত জনতা তাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর তার মরদেহ ঢাকা-ময়মেনসিংহ মহাসড়কে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা পুরো দেশে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের সৃষ্টি করেছে।
Updated
— Chief Adviser of the Government of Bangladesh (@ChiefAdviserGoB) December 23, 2025
Education Adviser visits Dipu Chandra Das’s family
Mymensingh, December 23, 2025: The Office of the Chief Adviser has expressed its profound sorrow over the killing of factory worker Dipu Chandra Das in Mymensingh and extended its deepest condolences to his family.
On… pic.twitter.com/8Egz4Ntco2
পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর তদন্তে জানা গেছে, কারখানার কিছু সহকর্মী ও উগ্রপন্থী জনতা মিলে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কিছু রিপোর্ট অনুসারে, তাকে জোর করে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করা হয় এবং পরে উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশের মতে, সময়মতো খবর পেলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হতো।
দীপু চন্দ্র দাস হত্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের নিন্দা, যুক্তরাষ্ট্র থেকেও প্রতিক্রিয়া
এদিকে, এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা এই হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন। ইলিনয়ের কংগ্রেসম্যান রাজা কৃষ্ণমূর্তি এই হত্যাকে ‘লক্ষ্যবস্তু করে চালানো মব হত্যাকাণ্ড’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি দীপু চন্দ্র দাসের লক্ষ্যবস্তু করে চালানো মব হত্যাকাণ্ডে স্তম্ভিত। এটি বাংলাদেশে চলমান বিপজ্জনক অস্থিরতা ও অশান্তির মধ্যে একটি সহিংসতার ঘটনা।” তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন যে, পূর্ণ ও স্বচ্ছ তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সুরক্ষা দিতে হবে।
নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিউম্যান জেনিফার রাজকুমারও এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ক্রমাগত সহিংসতা চলছে। তিনি বলেন, “একটি মব তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, আগুনে পুড়িয়েছে এবং তার দেহ মহাসড়কে ফেলে রেখেছে।” তিনি বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
এই ঘটনা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। অনেকে মনে করছেন, সরকার পরিবর্তনের পর থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে। দীপু চন্দ্র দাসের এই নৃশংস হত্যা শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব এখন এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করা এবং সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
